অল্প অল্প রান্নার গল্প
কথায় বলে যে রাঁধে, সে চুল ও বাঁধে। তা আমি কোনোকালেই ঠিক করে চুল বাঁধতে পারিনা। মাঝেমধ্যেই চুলে চিরুনি পড়েনা। আর দুমাস আগে পর্যন্ত রান্নাও তেমনি ছিল। ডাল সিদ্ধ করতে পারতাম, ব্যাস ওই পর্যন্তই। সিদ্ধ ডাল দিয়ে কি করে যে ডাল বানাতে হয়, সেটাও জানতাম না। তবে রান্নার প্রতি উৎসাহ ছিল ছোট থেকেই। আমার ছোটবেলায়, মা মাঝেমধ্যেই ভাত থেকে হলুদ ফ্যান ফেলতো, কিম্বা ভাতের মধ্যে অযাচিত মশলা আবিষ্কার হত। তরকারি তে পরিমান মতো নুন হলুদ দেওয়ার পরেও নুনপোড়া হলুদপোড়া স্বাদ হত। তা এসবের পেছনে, আমার অপরিসীম অবদান থাকত।
আরেকটু বড় হওয়ার পর, এসব ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট থেকে মন উঠে গেছিল। তারপর থেকে ক্লাস XII অব্দি, রান্না ঘরের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল লিকার চা (দুধ চা বানালে সেটা পায়েস হয়ে যেত ) আর হরলিক্স বানানোতে। Basically, গ্যাস জ্বালিয়ে জলটা কোনোমতে গরম করতে পারতাম। প্রথম ঠিকঠাক রান্না করার অপচেষ্টা করি XII পাশ করার পর। বাবা পুঁটি মাছ নিয়ে এসেছিল আর মা কোনো কারনে বাড়ি ছিলোনা। তো আমি নিজে যেচেই পুঁটি মাছ রান্নার গুরুভার কাঁধে নিয়েছিলাম। কারন, আমার বাবার রান্নাও খুব ভালো নয়। তো পুঁটি মাছ রাঁধতে আমার মূলধন ছিল মার থেকে শোনা কিছু কথা, আমি জানতাম যে মা রান্নায় চিনি আর টোম্যাটো দেয়। ব্যাস এইটুকুই জ্ঞান। এই সামান্য জ্ঞানকে পুঁজি করে রাঁধতে গিয়ে সেটা শেষ পর্যন্ত পুঁটি মাছের চাটনী হয়ে দাড়ায়।
আরেকটু বড় হওয়ার পর, এসব ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট থেকে মন উঠে গেছিল। তারপর থেকে ক্লাস XII অব্দি, রান্না ঘরের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল লিকার চা (দুধ চা বানালে সেটা পায়েস হয়ে যেত ) আর হরলিক্স বানানোতে। Basically, গ্যাস জ্বালিয়ে জলটা কোনোমতে গরম করতে পারতাম। প্রথম ঠিকঠাক রান্না করার অপচেষ্টা করি XII পাশ করার পর। বাবা পুঁটি মাছ নিয়ে এসেছিল আর মা কোনো কারনে বাড়ি ছিলোনা। তো আমি নিজে যেচেই পুঁটি মাছ রান্নার গুরুভার কাঁধে নিয়েছিলাম। কারন, আমার বাবার রান্নাও খুব ভালো নয়। তো পুঁটি মাছ রাঁধতে আমার মূলধন ছিল মার থেকে শোনা কিছু কথা, আমি জানতাম যে মা রান্নায় চিনি আর টোম্যাটো দেয়। ব্যাস এইটুকুই জ্ঞান। এই সামান্য জ্ঞানকে পুঁজি করে রাঁধতে গিয়ে সেটা শেষ পর্যন্ত পুঁটি মাছের চাটনী হয়ে দাড়ায়।

এরপর আর রিস্ক নেয়নি, দু-একবার ম্যাগি, পকোড়া আর চিড়ের পোলাও বানানো ছাড়া। এগুলো মোটামুটি চিনি বেশী, নুন কমে উৎরে গেছিলাম। আর XII পাশ করার পর, হোস্টেল, মেসে থাকার সুবাদে রান্না করার দরকার পড়েনি। তবে গত ৪/৫ বছরে চিত্রটা একটু করে পাল্টাচ্ছিল। কিছুটা পেটের দায়েই। মাঝেমধ্যেই মেসের খাবার মুখে রুচতোনা। তখন ইলেকট্রিক কেটেলে কিছু বানিয়ে নিতাম। তবে সেটা সব্জি সিদ্ধ, ডাল সিদ্ধ, ডিমের ভুরজি। হোস্টেলে লুকিয়ে বন্ধুরা একসাথে কয়েকবার রান্না করা হলেও, আমার অনুদান ওই সবজি কাটা, ধোয়া, বাসন ধোয়া পর্যন্ত। এরমাঝে বয়ফ্রেন্ডকে স্প্যানিশ ওমলেট বানিয়ে খাইয়েছিলাম। কিন্তু সেটা এতো নুনপোড়া হয়েছিল যে, এখনো সুযোগ পেলে খোঁটা শুনতে হয়। মাঝেমধ্যেই শুনতে হত "রান্নাটা একটু শেখ" । তবে সে চেষ্টা আমি কোনোদিনই করিনি। আমার ধারনা ছিল, রান্নার থিয়োরীটা আমি জানি, জাস্ট উপযুক্ত রান্নাঘরের অভাবে আমার প্রতিভা প্রকাশ পাচ্ছেনা। বাড়িতে গেলেও, মা রান্নাঘর নোংরা হওয়ার ভয়ে আমাকে সেখানে রান্না করতে দিতনা। আর শশুরবাড়িতেও আজ অব্দি আমি একবারই গরমজলে টিব্যাগ ডুবিয়ে চা বানিয়েছি।
তা হঠাৎই একরকম আমার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটার সুযোগ হয়ে গেল, দুমাসের বর-ভিজিটে। আমার বর আদ্যান্ত মাংসাশী। চিকেন, ল্যাম্ব ছাড়া কিছু রাঁধতে পারেনা, খুব বেশি হলে ডিম ভাজে আর চিংড়ি রাঁধতে পারে। আমার আবার একটু সব্জী না হলে চলেনা। শুরুটা হয়েছিল সব্জী খাওয়ার তাগিদেই। আর সাজানো গোছানো রান্নাঘর ও আছে এখানে।
শুরু করেছিলাম সুজির উপমা দিয়ে। নুন কম হয়ে গেছিল। তারপর সব্জীডাল, ওটসের উপমা। আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে, আর বর ও হেল্প করেছে প্রথম দিকে। প্রথমবার চিকেন বানাতে গিয়ে এমন কষেছিলাম যে পুরো চিকেন কিমা হয়ে গেছিল। এখন মোটামুটি ঠিকঠাক ডাল, সব্জী, তরকারি, চাটনী বানাতে পারি । বর এখন স্বীকার করে যে রান্নাটা আমি জানি।
Comments
Post a Comment