আমার হাসপাতাল ভ্রমণ
নানা ঘাটের জল খেয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষের মধ্যিখানে আসা গেল। শহরের নাম ভোপাল, আদর করে বলা হয় সিটি অফ লেক। দুটি বিশালার লেক এর তীরে, আধা পাহাড়ি শহর। সে যাই হোক, যে ইনস্টিটিউট এ কাজ করবো, তারা হেব্বি নিয়ম মেনে চলে। সব কিছু করার আগে ফর্ম ভরতে হয়। আমাকে গুনে গুনে ৯ টা ফর্ম ভরতে হবে। তার মধ্যে একটা, দেশের কোন তালুকে আমার কটা বাড়ী, কত বিঘা জমী আছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সহকারে হিসাব দিতে হবে। এরা হয়তো জানেনা পিএইচডি করে আর যাই হোক, গাড়ি বাড়ীর মালিক হওয়া যায়না। আরেকটি ফর্মে, আমি আমার বরের একমাত্তর বৌ কিনা বা আমার একটি মাত্র বর কিনা তার বিবৃতি দিতে হবে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে কোনো ফর্ম নেই, তো সেটা বোধয় allowed . আরো খান কতক হাবি জাবি ডিক্লারেশন ইত্যাদি।
আর আছে একটি মেডিকেল রিপোর্ট ফর্ম। সেটা কোনো গভর্নমেন্ট হাসপাতাল এর ডাক্তারবাবু কে দিয়ে সই করাতে হবে। লোকমুখে জানা গেলো, ইনস্টিটিউট এর অদূরে একটা গভর্মেন্ট 'মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল' আছে। সেখানে গিয়ে ১০ টাকার ফর্ম ভরে , আউটডোর এর ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেই হয়ে যাবে। ইনস্টিটিউট থেকে সেই হাসপাতালে আবার ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স চলে দিনে বেশ কয়েকবার, তো যাতায়াত নিয়েও কোনো চিন্তা নেই।
আমার আবার সব কাজে ভীষণ ল্যাদ, খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে। পাঁজি পুঁথি মানিনা, কিন্তু নিজের ল্যাদ ক্যালেন্ডার দেখে সব কিছু করি। রবিবার দিন সকালে উঠে মনে হলো, আজ যাওয়া যাক হাসপাতাল। সকাল সকাল উঠে অ্যাম্বুলেন্স এ চেপে পৌছালাম। এর আগে কোনোদিন হাসপাতাল এর আউটডোর এ যায়নি। পৌছে দেখলাম, রবিবার বলে আউটডোর বন্ধ। কি আর করা, ফেরার জন্য অ্যাম্বুলেন্সর অপেক্ষা করছি। হঠাৎ কানে এল, জোরে জোরে মাইকে ভগবানের জপ চলছে হাসপাতাল ক্যাম্পাস এর মধ্যেই। রোগীরা বুঝি হাসপাতালএর বেড এ শুয়েই পুণ্যার্জন করছে। ভক্তকূল আকূল হয়ে ভগবানের কাছে অনেক কিছু চাইছেন।
সেদিন তো কাজ হলোনা, তাই পরে আরেক দিন গেলাম। আউটডোর এ দেখাতে গেলে, একটা ফর্ম ভরে ১০ টাকা দিতে হয়। সেই ফর্মে নাম, বয়স ইত্যাদি লিখতে হয়। ম্যারিটাল স্টেটাস এ Married লিখলাম। আর এক জায়গায় gurdian's /husband's নাম জানতে চেয়েছে। তো আমি gurdian's এর মাথায় টিক্ দিয়ে বাবার নাম লিখলাম (মা'র নাম লিখিনি, কারণ কোনো কারনে মাকে এরা মাকে যোগাযোগ করলে, আমার মা 'মেয়ে' আর 'হাসপাতাল', এই দুটো শব্দ শুনেই অক্কা পেয়ে যাবে)। ফর্ম টা ভরে, কাউন্টারে বসা ভদ্রমহিলাটিকে দিলাম, তিনি এই ডাটা গুলো কম্পিউটারে এন্ট্রি করবেন। তা তিনি একবার, যা লিখেছি, ঠিক লিখেছি কিনা, ভেরিফাই করতে শুরু করলেন। সব ঠিক ঠাক চলছিল, কিন্তু আমি 'বিবাহিত', এবং তা সত্ত্বেও গার্ডিয়ান এ বাবার নাম লেখাতে, তীব্র আপত্তি জানালেন। আমার সরল মাথায় কিছুতেই ঢুকলোনা যে কেন বিবাহিত হওয়ার দরুন সবসময় আমার গার্ডিয়ান আমার বর। মহিলা কিছুতেই বাবার নাম লিখলেন না, আর আমার মুখ দিয়ে বরের নাম বের করলেন। আমার আর প্রশ্ন করতে সাহস হলনা যে রোগী যদি বিবাহিত পুরুষ হন, তবে তার জন্য 'গার্ডিয়ান/ওয়াইফ এর নাম ' অপসন কেন নেই।
তা সে আমার অভিভাবক কে, সে সমস্যা মিটিয়ে এবার ডাক্তারবাবু র জন্য অপেক্ষা শুরু হলো। বেশ কিছুক্ষন পর এক সুন্দরী, সুবেশিকার প্রবেশ ডাক্তার এর চেম্বারে। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে, ফর্ম দেখিয়ে তাকে বললাম, এইটা ওনাকে একটু ভরে , একটা সই করতে হবে। দু পাতার ফর্ম। প্রথম পাতায় আমি পাগল নই (আপেক্ষিক ভাবে), আমার কোনো কঠিন অসুখ নেই , আর দ্বিতীয় পাতায় ডাক্তারবাবুর সই। তো তিনি ফটাফট প্রথম পাতা ভরে, দ্বিতীয় পাতায় সই টি করে বল্লেন, 'আমার তো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই, আমি তো সবে MD পাস করে এখানে জয়েন করেছি। তোমার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়াই কাজ চলে যাবে।' অতি কষ্টে ডক্টর অফ ফিলোসফি কমপ্লিট করার দরুন নিজের নাম এর আগে একটা Dr. থাকলেও, মেডিকেলএ আমার জ্ঞান শূন্য।তবে এটুকু জানতাম MBBS করার পরেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে যায়। আমার এক বন্ধুর কথা অনুযায়ী, ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর হলো 'licence to kill'. একটু আমতা আমতা করে বললাম, আপনার রেজিস্ট্রেশন নম্বর আছে, হয়ত আপনি ভুলে গেছেন, নিশ্চয় আপনার কাছে কোনো ডকুমেন্ট আছে, যেখানে সেটা লেখা আছে। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন তার মোবাইলে ফটো তুলে রাখা সার্টিফিকেট আর নানা জিনিস দেখে, সুনিশ্চিত হয়ে বললেন যে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর এক্সিস্ট করেইনা। তিনিতো সবে MD পাস করেছেন।
বন্ধুর পরামর্শে, নিজের ফোন নম্বরটা দিয়ে বললাম, `ম্যাডাম, বাড়ি ফিরে যদি রেজিস্ট্রেশন নম্বর টা খুঁজে পান, আমাকে দয়া করে একটু জানাবেন।
তার ঘন্টা খানেক পরেই একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলো। সুমিষ্ট কণ্ঠে জানালেন যে তিনি তার রেজিস্ট্রেশন নম্বরএর existence সম্মন্ধে অবগত হয়েছেন এবং সেটি জানালেন।
আর আমার অনুভূতি হলো, এ ক্ষুদ্র জীবনে একটা সমাজ সেবা করলাম, এক ডাক্তার কে সুনিশ্চিত করলাম যে তার সত্যি ডাক্তারি করবার আইনত অধিকার আছে।
বি: দ্রঃ বানান ভুল বা ছোটোখাটো typo থাকতে পারে। ভালোবেসে মানিয়ে নেবেন।
Kemon lagche IISER Bhopal??
ReplyDeleteBah darun ekta experience
ReplyDelete