করবনা অপচয় #zerowaste

করোনার আগে পর্যন্ত আমাদের মাথা ব্যাথা ছিল পরিবেশ দূষণ। খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ত দিল্লির বায়ু দূষণ, চেন্নাই তে জলসঙ্কট, বা কোথাও প্লাস্টিক ও আবর্জনা তে লেক ভরে গেছে। আমরা হেড লাইনে চোখ বুলিয়ে রেখে দিতাম, এসব পড়ে কি হবে, আমার চারপাশে তো এরকম সমস্যা নেই। আমরা এটা কখনো ভাবিনা যে আজ যদি আমি চোখ থাকতে অন্ধ হয়ে থাকি, অদূর ভবিষ্যতে আমার এলাকাতেও একই সমস্যা হবে।
যারা পরিবেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, বা কিভাবে পরিবেশ বাঁচানো যায়, তা নিয়ে একটু আধটু ভাবেন, তারা zero waste lifestyle বা অপচয়হীন জীবনযাপন শব্দ গুলির সাথে পরিচিত। পাশ্চাত্যে বেশ কিছু বছর আগেই এই trend টি শুরু হয়েছে। Internet এ খোঁজ করলে প্রচুর ব্লগ, ভিডিও লিঙ্ক পাওয়া যাবে। ভারতেও বেশ কিছু বছর হল, কয়েকজন শুরু করেছেন।
এই জীবনযাত্রার মূল উদ্দেশ্য হল, অপচয় কমানো। রোজ আমরা যে পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ আস্তাকুড়ে ফেলে দি, তার পরিমাণটা যতটা সম্ভব কমানো। এটা করতে গেলে আমাদের কে কতগুলো ধাপে কাজটাকে ভাঙতে হবে।
প্রথমেই ভাবতে হবে, আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যতটা দরকার মনে করে কিনি, ততটা সত্যি প্রয়োজন আছে কিনা। প্রথমেই নিজের প্রয়োজনের পরিমাপ টা বুঝতে হবে।খুব সহজ একটা উদাহরণ হল, আমরা যদি প্রতিদিন নিজেদের জন্য কতটুকু খাবার প্রয়োজন হয় জানি এবং সেটুকুই রান্না করি, তাহলে আমাদের কে বাড়তি খাবার টা ফেলে দিতে হয়না বা বাসি খাবার খেতে হয়না। আমরা অনেক সময় শপিং এ গেলে, ঝোঁকের বশে প্রচুর জামা কাপড় , খাবার দাবার বা অন্য কিছু কিনে বসি, যেগুলো ভবিষ্যতে আমরা ব্যাবহার করিনা বা খুবই অল্প সময়ের জন্য ব্যাবহার করি।একটু ভাবনা চিন্তা করলে আমরা কিন্তু এই বাড়তি জিনিস গুলো এড়াতে পারি এবং আমাদের পকেটও বাঁচে। ইংলিশ এ এটাকে বলে refuse and reduce.
আমাদের ঘরে এরকম অনেক জিনিস থাকে যেগুলো আপাত দৃষ্টি তে কোন কাজে লাগেনা, কিন্তু একটু ভাবলে সেগুলোই আমরা অন্য কোন কাজে লাগাতে পারি। যেমন ঘরে কোন হাতল ভাঙ্গা মাগ থাকলে আমরা খুব সহজে সেখানে ফুলের গাছ লাগাতে পারি। রোজকার রান্নাঘর থেকে যেসব আনাজ পাতির খোসা আসে, সেগুলো কে পচিয়ে গাছে সার দিতে পারি। এই পদ্ধতি কে বলে repair and reuse.
আমি এখানে যে কথা গুলো লিখছি, সেগুলো নতুন কিছু নয়। এগুলো খুব কঠিন কোন কাজ নয়, আমরা যদি দুটো জেনারেশন আগে চলে যাই, আমাদের দিদিমা ঠাকুমারা এই পদ্ধতি অনুসরন করতেন। ইংলিশ এ প্রচুর ব্লগ বা ভিডিও আছে zero waste life style এর ওপর। বাংলা তে আমি তেমন কোন লেখা পাইনি। আমার উদ্দেশ্য হল বাংলা ভাষাতে পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। একদিনে আমরা পরিবেশ কে বাঁচিয়ে তুলতে পারবনা, কিন্তু আমরা সবাই যদি নিজেদের সাধ্য মত রোজ অল্প অল্প করে চেষ্টা করি, হয়ত আমরা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার থেকে বাঁচাতে পারব।
শুরুতেই আমরা খুব সহজে যেটা করতে পারি, সেটা হল প্লাস্টিক ব্যাবহার বন্ধ করা বা কমানো। আমরা শুরু করতে পারি প্লাস্টিক এর জলের বোতল সরিয়ে স্টিল বা কাঁচের বোতল ব্যাবহার করা। আজকাল খুব ছোট সাইজর স্টিলের বোতলও পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা বাড়ি থেকে বেরোলে সাথে রাখতে পারি। সব station বা airport এ drinking water tap থাকে, জল ফুরিয়ে গেলে ভরে নিতে পারি।তাহলে আমাদের কে নতুন জলের বোতল কিনতে হয়না, বা ক্ষতিকারক প্লাস্টিক এর বোতল থেকে জল খেতে হয়না।
এখন আপনি ভাবতেই পারেন যে, আমার কাছে তো প্লাস্টিক এর বোতল আগে থেকেই ছিল, সেটা দিয়ে কি করব? একটু ভাবলেই আপনি সেটা অন্য ভাবে পুনরব্যাবহার করতে পারেন।
এখন আপনি ভাবতেই পারেন যে, আমার কাছে তো প্লাস্টিক এর বোতল আগে থেকেই ছিল, সেটা দিয়ে কি করব? একটু ভাবলেই আপনি সেটা অন্য ভাবে পুনরব্যাবহার করতে পারেন।
যারা working এবং চা প্রেমী, তারা দিনে অন্তত ৩-৪ কাপ চা খান। এখন অধিকাংশ canteen এ পেপার কাপ ব্যাবহার করা হয়, যেগুলো তে অল্প পরিমাণ প্লাস্টিক থাকে, এতে গরম চা খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। আর আমরা যত বেশি কাগজের কাপ ব্যাবহার করব, তত গাছ কাটা পড়বে। একটু সচেতন হলে আমরা এটা কিছুটা এড়াতে পারি। আমরা নিজেদের ডেস্ক এ একটা নিজের জন্য চিনামাটি বা কাঁচের, বা ভেঙ্গে যাওয়া এড়াতে স্টিল এর কাপ রাখতে পারি। এটা যেহেতু নিজের ব্যাক্তিগত, প্রত্যেক বার ব্যাবহারের পর এটা সাবান দিয়ে না ধুলেও চলবে, শুধু জলে ধুয়ে নিলেই হবে। এভাবে আমরা জল দূষণও কমাতে পারি কিছুটা।
আজকাল কিছু কিছু রাজ্যে সরকার থেকে উদ্যোগ নিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যাবহার আইনত নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে কিছু হবেনা, আমাদের কেও চেষ্টা করতে হবে, নাহলে সরকারি নিয়ম শুধু খাতাকলমেই থেকে যাবে। শপিং করার সময় আমরা কাপড়ের ব্যাগ ব্যাবহার করতে পারি, যেটা বহুবার ব্যবহার করা যাবে। supermarket এ সব্জি প্লাস্টিকের ব্যাগ এ বিক্রি হয়, সেখান থেকে না কিনে, আমরা সব্জি খোলা বাজার থেকে কিনতে পারি, তাহলে আমরা নিজেরা দেখে শুনে কিনতে পারি আর দামেও সাশ্রয় হয়।
আমাদের সবার ছোট্ট ছোট্ট প্রচেষ্টাই আকারে বড় হয়ে, পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে।
Comments
Post a Comment